শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫ - ১১:৫০
আলেম-ওলামাদের অক্লান্ত সাধনায় তেহরান জ্ঞানের শিখরে আরোহণ করেছে

ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের রাজধানী তেহরানের ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সম্মাননা অনুষ্ঠানে দেশব্যাপী মাদ্রাসা পরিচালনা বোর্ডের প্রধান আয়াতুল্লাহ আরাফি বলেন, “আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত হলো নবী-রসুল ও ইমাম মাহদী (আ.)-এর অনুসারী হওয়া। যারা এই পবিত্র পথে আছেন, তারা এ অনুভূতি কোনো কিছুর বিনিময়ে হারাবেন না।”

হাওজা নিউজ এজেন্সি: আয়াতুল্লাহ আরাফি ধর্মীয় শিক্ষার ঐতিহাসিক পথচলা স্মরণ করে বলেন, এটি মদিনা থেকে শুরু হয়ে কুফা, বাগদাদ, হিল্লা ও সামারার মাধ্যমে ইরানের রেই (প্রাচীন তেহরান), কোম ও তেহরানে বিকাশ লাভ করেছে। 

যুদ্ধে আলেমদের ত্যাগ:
আয়াতুল্লাহ আরাফি ইরাক-ইরান যুদ্ধে ধর্মীয় সম্প্রদায়ের অবদানের কথা উল্লেখ করে বলেন, “৫ হাজার আলেম ও তালিবে ইলম যুদ্ধে শাহাদাতবরণ করেছেন, যাদের মধ্যে উচ্চপদস্থ ফকিহ থেকে শুরু করে নবীন শিক্ষার্থীরাও ছিলেন।” তিনি বিশেষভাবে ইরাকের শহীদ আয়াতুল্লাহ সাদরের শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, “তিনি যদি বেঁচে থাকতেন, আজ ইসলামী আইনশাস্ত্রের অগ্রদূত হতেন।” 

তেহরানের দার্শনিক উত্তরাধিকার:
তেহরান শুধু ধর্মীয় শিক্ষাই নয়, দর্শন ও ইসলামী চিন্তারও কেন্দ্রবিন্দু। আয়াতুল্লাহ আরাফি বলেন, “মোল্লা সাদরার দর্শন আজও প্রাসঙ্গিক। শাহাবাদী, শহীদ মোতাহহারী ও প্রফেসর মুহাম্মাদ তাকি জাফরির মতো মনীষীরা তেহরানকে জ্ঞানের পীঠস্থানে পরিণত করেছেন। বিশেষত, শাহাবাদী ইমাম খোমেনী (রহ.)-কে ইসলামী রহস্যবাদে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিলেন।”

জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে মাদ্রাসার ভূমিকা:
ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শুধু ধর্মীয় বিষয়েই নয়, মানবিক ও সমাজিক সমস্যা সমাধানেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। আয়াতুল্লাহ আরাফি বলেন, “ইমাম খোমেনী (রহ.), শায়খ আব্দুল করিম হায়েরীর মতো ব্যক্তিত্বরা এই প্রতিষ্ঠান থেকেই গড়ে উঠেছেন। আমাদের ১২০০ বছরের জ্ঞানচর্চার ইতিহাস গর্ব করার মতো।”

তেহরানে ধর্মীয় শিক্ষার বর্তমান অবকাঠামো:
তেহরান ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালক হুজ্জাতুল ইসলাম রহিমি সাদেক বলেন, “এখানে ৬১টি দীর্ঘমেয়াদি মাদ্রাসা, ৪টি 'সফিরানে হেদায়াত' বিশেষ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ৬টি গবেষণা ইনস্টিটিউট ও ২৪টি উচ্চতর গবেষণা ক্লাস সক্রিয় রয়েছে।” তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, আয়াতুল্লাহ আরাফির এই সফর তেহরানের ধর্মীয় শিক্ষাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। 

সম্মাননা ও অনুষ্ঠানের বিশেষ মুহূর্ত:
অনুষ্ঠানে তেহরানের সেরা শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও মাদ্রাসাগুলোকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। এর মধ্যে ইমাম খোমেনী (রহ.) মাদ্রাসার এক তালিবে ইলমকে আনুষ্ঠানিকভাবে ধর্মীয় পোশাক (লেবাসে রুহানিয়াত) পরিধান করানো হয়, যা ধর্মীয় শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বড় প্রাপ্তি। 

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও শতবার্ষিকী উদযাপন:
আয়াতুল্লাহ আরাফি জানান, আগামী এপ্রিলে কোম ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠার ১০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বড় আকারের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে, যেখানে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা একটি বিশেষ ঘোষণা দেবেন। এছাড়া, ধর্মীয় শিক্ষার আধুনিকায়নে ১০০টিরও বেশি সংস্কারমূলক প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন।

Tags

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha